• আহনাফ হাসান বাপ্পি:

    • জীবন সমস্যা সমাধানে ইসলাম এক কালোত্তীর্ণ জীবন ব্যবস্থা আলহামদুলিল্লাহ। কিয়ামত অবধি মানব সভ্যতা যত সমস্যায় পড়বে তার অসাধারণ সমাধান ইসলামে দেয়াই আছে। গোটা বিশ্ব সভ্যতা যে একসময় ইসলামের কোলে বিলীন হবে এটা ইসলামের সমৃদ্ধ জীবন পদ্ধতি থেকে অনুমান করা যায়। এরজন্য ইসলামিস্টদের উদার মনে ইসলামের মহত্বগুলোকে মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে, ঠেলাঠেলি বাদ দিয়ে।
      নারী দিবস নিয়ে সামাজিক মাধ্যম এবং পত্র-পত্রিকাগুলো বেশ সরব আজকে। প্রত্যেকেই নারী অধিকার নিয়ে বিভিন্ন কথা বলছে।

বর্তমান সময়ে নারীরা বেশ এগিয়ে আছে। শিক্ষা-দীক্ষা থেকে শুরু করে পার্লামেন্ট পর্যন্ত নারীদের সংখ্যা এখন উল্লেখযোগ্য। কিছু ক্ষেত্রে ছেলেদের চেয়ে বেশি। এত কিছুর মধ্যে নারী অধিকার কতটুকু সমাজে প্রতিষ্ঠিত আছে? একজন চাকুরীজীবি নারী পরিবার এবং চাকুরী সামলাতে হাড়ভাঙ্গা খাটুনি, এক ধরনের স্লেভারির মধ্যে আছে। পরিবার পর্যায়ে অনেক গৃহবধূ এখনও শারীরিক নির্যাতনের স্বীকার। এভাবে দিবস পালন করে আর সেকুলারিজমের বুলি আওড়িয়ে নারীর অধিকার শুধু কল্পনা আর পত্রিকার পাতাতেই রয়ে যাবে।

শ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলামে এর সমাধান রয়েছে। নারী পুরুষের জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ কাঠামো ইসলামে রয়েছে এর ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে নারীর অধিকার।
ইসলামের মহাগ্রন্থ আল কোরআনে ‘নিসা’ অর্থাৎ ‘মহিলা’ শব্দটি ৫৭ বার এবং ‘ইমরাআহ’ অর্থাৎ ‘নারী’ শব্দটির ২৬ বার উল্লেখ হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ‘নিসা’ তথা ‘মহিলা’ শিরোনামে নারীর অধিকার ও কর্তব্যসংক্রান্ত একটি স্বতন্ত্র বৃহৎ সূরাও রয়েছে।

এ ছাড়া কোরআনের বিভিন্ন আয়াত ও হাদিসে নারীর অধিকার, মর্যাদা ও তাদের মূল্যায়ন, ইসলাম নারীর ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছে। দিয়েছে নিরাপত্তা।
শিক্ষার ব্যাপারে বলা আছে- ‘তোমরা তাদের (নারীদের) সঙ্গে উত্তম আচরণ করো ও উত্তম আচরণ করার শিক্ষা দাও।’ (সূরা-৪ নিসা, আয়াত: ১৯)। মহানবী (সা.) ঘোষণা করেন, ‘যার রয়েছে কন্যাসন্তান, সে যদি তাকে (শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে) অবজ্ঞা ও অবহেলা না করে এবং পুত্রসন্তানকে তার ওপর প্রাধান্য না দেয়; আল্লাহ তাআলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘তোমরা নারীদের উত্তম উপদেশ দাও (উত্তম শিক্ষায় শিক্ষিত করো)।’ হাদিস শরিফে বলা হয়েছে, ‘ইলম শিক্ষা করা (জ্ঞানার্জন করা) প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর প্রতি ফরজ (কর্তব্য)।’
মায়ের পায়ের নীচে রয়েছে সন্তানের বেহেশত।

রাসুল সাঃ এর সময় ওয়াইজ করোনি মায়ের সেবা করতে গিয়ে নবীদের সাথে দেখা করতে পারেনি। এর পুরস্কার স্বরূপ রাসুল সালাম সালাম এর ওফাতের পর নবীজির জামা মুবারক পেয়েছিলেন।

মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘মেয়েশিশু বরকত (প্রাচুর্য) ও কল্যাণের প্রতীক।’ হাদিস শরিফে আরও আছে, ‘যার তিনটি, দুটি বা একটি কন্যাসন্তান থাকবে; আর সে ব্যক্তি যদি তার কন্যাসন্তানকে সুশিক্ষিত ও সুপাত্রস্থ করে, তার জান্নাত নিশ্চিত হয়ে যায়।’
মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘কারও যদি কন্যাসন্তান ও পুত্রসন্তান থাকে আর তিনি যদি সন্তানদের জন্য কোনো কিছু নিয়ে আসেন, তবে প্রথমে তা মেয়ের হাতে দেবেন এবং মেয়ে বেছে নিয়ে তারপর তার ভাইকে দেবে।’ হাদিস শরিফে আছে, বোনকে সেবাযত্ন করলে আল্লাহ প্রাচুর্য দান করেন।

স্ত্রীর বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে সে–ই উত্তম, যে তার স্ত্রীর কাছে উত্তম।’ (তিরমিজি)। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের সঙ্গে সদাচরণ করো।’ (সূরা-৪ নিসা, আয়াত: ১৯)। কোরআনে আরেক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘নারীদের ওপর যেমন অধিকার রয়েছে পুরুষের, তেমনি রয়েছে পুরুষের ওপর নারীর অধিকার।’ (সূরা-২ বাকারা, আয়াত ২২৮)।
বিধবার অধিকার ও সম্মান দেয়া হয়েছে ইসলামে।বিধবাদের অধিকার সম্পর্কে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘যারা বিধবা নারীর ভরণ–পোষণের দায়িত্ব নেয়, তারা যেন আল্লাহর পথে জিহাদকারী এবং নিরলস নামাজি ও সদা রোজা পালনকারী। (বুখারি ও মুসলিম)।

এমন অসংখ্য মহান উপদেশ নারী অধিকার বিষয়ে বলা আছে ইসলামে। যেটা কিয়ামত পর্যন্ত নারী অধিকার সুরক্ষায় যথেষ্ট। হাতের কাছে আলোকোজ্জ্বল সমাধান রেখে আমরা কানার মত অন্ধকারে হাতরে বেড়াই।

কলামিস্ট ও সাংবাদিক